খেলাভোলা
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
তুই কি ভাবিস দিন রাত্তির
খেলতে আমার মন ?
কক্ষনো তা সত্যি না মা ,
আমার কথা শোন ।
সেদিন ভোরে দেখি উঠে
বৃষ্টি বাদল গেছে ছুটে ,
রোদ উঠেছে ঝিলমিলিয়ে
বাঁশের ডালে ডালে ।
ছুটির দিনে কেমন সুরে
পুজোর সানাই বাজছে দূরে ,
তিনটি শালিক ঝগড়া করে
রান্নাঘরের চালে ।
খেলনাগুলো সামনে মেলি
কিযে খেলি , কি যে খেলি ,
সেই কথাটাই সমস্তক্ষণ
ভাবনু আপন মনে ।
লাগল না ঠিক কোনো খেলাই
কেটে গেল সারা বেলাই ---
রেলিং ধরে রইনু বসে
বারান্দাটার কোনে ।।
খেলাভোলার দিন মা ,
আমার আসে মাঝে মাঝে ---
সেদিন আমার মনের ভিতর
কেমনতর বাজে ।
শীতের বেলায় দুই পহরে
দূরে কাদের ছাদের পরে
ছোট্ট মেয়ে রোদ্দুরে দেয়
বেগনি রঙের শাড়ি ।
চেয়ে চেয়ে চুপ করে রই ,
তেপান্তরের পার বুঝি ওই ---
মনে ভাবি ওইখানেতেই
আছে রাজার বাড়ি ।
থাকত যদি মেঘে ওড়া
পক্ষীরাজের বাচ্ছা ঘোড়া ,
তক্ষুনি যে যেতেম তারে
লাগাম দিয়ে কষে ।
যেতে যেতে নদীর তীরে
ব্যঙ্গমা আর ব্যঙ্গমীরে।
পথ শুধিয়ে নিতেম আমি
গাছের তলায় বসে।।
এক এক দিন যে দেখেছি
তুই বাবার চিঠি হাতে
চুপ করে কী ভাবিস বসে
ঠেস দিয়ে জানালাতে।
মনে হয় তোর মুখ চেয়ে
তুই যেন কোন দেশের মেয়ে,
যেন আমার অনেক কালের
অনেক দূরের মা।
কাছে গিয়ে হাতখানি ছুই
হারিয়ে যাওয়া মা যেন তুই,
মাঠ পারে কোন বটের তলায়
বাঁশির সুরের মা।
খেলার কথা যায় যে ভেসে,
মনে ভাবি কোন কালে সে
কোন দেশে তোর বাড়ি ছিল
কোন সাগরের কুলে।
ফিরে যেতে ইচ্ছে করে
অজানা সেই দ্বীপের ঘরে
তোমায় আমায় ভোর বেলাতে
নৌকোতে পাল তুলে।।
No comments:
Post a Comment