পালকির গান
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
পালকি চলে!
পালকি চলে!
গগন-তলে
আগুন জ্বলে!
স্তব্ধ গাঁয়ে
আদুল্ গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা
ময়রা মুদি
চক্ষু মুদি'
পাটায় ব'সে
ঢুলছ ক'ষে!
দুধের চাঁছি
শুকছে মাছি,_
উড়ছে কতক
ভন্ ভনিয়ে।_
আসছে কা'রা
হন্ হনিয়ে?
হাটের শেষে
রুক্ষ বেশে
ঠিক্ দুপুরে
ধায় হাটুরে!
কুকুরগুলো
শুঁকছে ধুলো,_
ধুঁকছে কেহ
ক্লান্ত দেহ।
ঢুকছে গরু
দোকান-ঘরে,
আমের-গন্ধে
আমোদ করে!
পালকি চলে,
পালক চলে_
দুল্কি চালে
নৃত্য তালে!
ছয় বেহারা,_
জোয়ান তারা,_
গ্রাম ছাড়িয়ে
আগ্ বাড়িয়ে
নামলো মাঠে
তামার টাটে!
তপ্ত তামা;_
যায় না থামা,_
উঠ্ছে আলে
নামছে গাঢ়ায়,_
পালকি দোলে
ঢেউয়ের নাড়ায়!
ঢেউয়ের দোলে
অঙ্গ দোলে!
মেঠো জাহাজ
সামনে বাড়ে,_
ছয় বেহারার
চরণ-দাঁড়ে!
কাজ্লা সবুজ
কাজল প'রে
পাটের জমী
ঝিমায় দূরে!
ধানের জমী
প্রায় সে নেড়া,
মাঠের বাটে
কাঁটার বেড়া!
'সামাল্' হেঁকে
চলল বেঁকে
ছয় বেহারা,_
মর্দ্দ তারা!
জোর হাঁটুনি
খাটনি ভারি;
মাঠের শেষে
তালের সারি।
তাকাই দূরে,
শূন্যে ঘুরে
চিল্ ফুকারে
মাঠের পারে।
গরুর বাথান,_
গোয়াল-থানা,_
ওই গো! গাঁয়ের
ওই সীমানা!
বৈরাগী সে,_
কণ্ঠী বাঁধা,_
ঘরের কাঁথে
লেপছে কাদা
মটকা থেকে
চাষার ছেলে
দেখছে, ডাগর
চক্ষু মেলে!
দিচ্ছে চালে
পোয়াল গুছি;
বৈরাগীটির
মূর্ত্তি শুচি।
পরু জাপতি
হলুদ বরণ,_
শশার ফুলে
রাখ্ছে চরণ!
কার বহুড়ি
বাসন মাজে?_
পুকুর ঘাটে
ব্যস্ত কাজে,_
এঁটো হাতেই
হাতের পোঁছায়
গায়ের মাথায়
কাপড় গোছায়!
পালক দেখে
আসছে ছুটে
ন্যাংটা খোকা,_
মাথায় পুঁটে!
পোড়ার আওয়াজ
যাচ্ছে শোনা,_
খোড়ো ঘরে
চাঁদের কোণা!
পাঠশালাটি
দোকান-ঘরে,
গুরুমশাই
দোকান করে!
পোড়া ভিটের
পোতার 'পরে
শালিক নাচে
ছাগল চড়ে।
গ্রামের শেষে
অশথ-তলে
বুনোর ডেরায়
চুল্লী জ্বলে;
টাটকা কাঁচা
শাল-পাতাতে
উড়ছে ধোঁয়া
ফ্যান্সা ভাতে।
গ্রামের সীমা
ছাড়িয়ে, ফিরে
পাল্কী মাঠে
নামলো ধীরে;
আবার মাঠে,_
তামার টাটে,_
কেউ ছোটে, কেউ
কষ্টে হাঁটে;
মাঠের মাটি
রৌদ্রে ফাটে,
পালকি মাতে
আপন নাটে!
শঙ্খচিলের
সঙ্গে, যেচে_
পাল্লা দিয়ে
মেঘ চলেছে!
তাতারসির
তপ্ত রসে
বাতাস সাঁতার
দেয় হরষে!
গঙ্গাফড়িং
লাফিয়ে চলে,
বাঁধের দিকে
সূর্য্য ঢলে।
পালকি চলে রে!
অঙ্গ ঢলে রে!
আর দেরী কত?
আরো কত দূর?
''আর দূর কি গো?
বুড়ো-শিবপুর
ওই আমাদের;
ওই হাটতলা,
ওরি পেছুখানে
ঘোষেদের গোলা।''
পালকি চলে রে,
অঙ্গ টলে রে;
সূর্য্য ঢলে,
পালকি চলে!
No comments:
Post a Comment