Sunday, 3 May 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা--কৃপণ

কৃপণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমি ভিক্ষা করে ফিরতেছিলেম গ্রামের পথে পথে,
তুমি তখন চলেছিলে তোমার স্বর্ণরথে ।
অপূর্ব এক স্বপ্নসম লাগতেছিল চক্ষে মম ---
কী বিচিত্র শোভা তোমার, কী বিচিত্র সাজ ।
আমি মনে ভাবতেছিলেম এ কোন্ মহারাজ ।।

আজি শুভক্ষণে রাত পোহালো, ভেবেছিলেম তবে
আজ আমারে দ্বারে দ্বারে ফিরতে নাহি হবে ।
বাহির হতে নাহি হতে কাহার দেখা পেলেম পথে ,
চলিতে রথ ধনধান্য ছড়াবে দুই ধারে ---
মুঠা মুঠা কুড়িয়ে নেব , নেব ভারে ভারে ।।

দেখি সহসা রথ থেমে গেল আমার কাছে এসে ,
আমার মুখ-পানে চেয়ে নামলে তুমি হেসে ।
দেখে মুখের প্রসন্নতা জুড়িয়ে গেল সকল ব্যথা ,
হেনকালে কিসের লাগি তুমি অকস্মাৎ
'আমায় কিছু দাও গো ' বলে বাড়িয়ে দিলে হাত ।।

মরি, এ কী কথা রাজাধিরাজ,' আমায় দাও গো কিছু ' -
শুনে ক্ষণকালের তরে রইনু মাথা - নিচু ।
তোমার কিবা অভাব আছে ভিখারি ভিক্ষুকের কাছে !
এ কেবল কৌতুকের বশে আমায় প্রবঞ্চনা ।
ঝুলি হতে দিলেম তুলে একটি ছোটো কণা ।।

যবে পাত্রখানি ঘরে এনে উজার করি ---- একি ,
ভিক্ষা-মাঝে একটি ছোটো সোনার কণা দেখি !
দিলেম যা রাজ-ভিখারিরে স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে ---
তখন কাঁদি চোখের জলে দুটি নয়ন ভরে ,
তোমায় কেন দিইনি আমার সকল শূন্য করে ?।

No comments:

Post a Comment