Monday, 28 January 2019

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের - ঝর্ণা

ঝর্ণা

ঝর্ণা ! ঝর্ণা ! সুন্দরী ঝর্ণা
তরলিত চন্দ্রিকা চন্দন বর্না
অঞ্চল সিঞ্চিত গৈরিকে স্বর্ণে
গিরি মল্লিকা দোলে কুন্তলে কর্ণে
তনু ভরি যৌবন তাপসী অপণা ! ঝর্ণা !!


পাষাণের স্নেহ ধারা তুষারের বিন্দু
ডাকে তোরে চিতলোল উতরোল সিন্ধু
মেঘ হানে জুঁইফুলি বৃষ্টি ও অঙ্গে
চুমাচুমকির হারে চাঁঁদ ঘেরে রঙ্গে
ধুলা ভরা দেয় ধরা তোর লাগি ধর্ণা ! ঝর্ণা !!


এসো তৃষ্ণার দেসে এসো কলহাস্যে
গিরি-দরি-বিহারিনী হরিণীর লাস্যে
ধূসরের উষরের করো তুমি অন্ত
শ্যামলীয়া ও পরশে করো গো সীমন্ত
ভরা ঘট এসো নিয়ে ভরসায় ভরনা ! ঝর্ণা !!


শৈলের পৈঠায় এসো তনুগাত্রী
পাহাড়ের বুকচেরা এসো প্রেমদাত্রী
পান্নার অঞ্জলি দিতে দিতে আয় গো
হরিচরণচ্যূতা গঙ্গার প্রায় গো
স্বর্গের সুধা আনো মর্ত্যে সুপর্ণা ! ঝর্ণা !!


মঞ্জুল হাসির বেলোয়ারি আওয়াজে
ওলো চঞ্চলা তোর পথ হল ছাওয়া যে
মোতিয়া মোতির কুঁড়ি ফুটছে ও অলকে
মেখলায় মরি মরি রামধনু ঝলকে
তুমি স্বপ্নের সখী বিদ্যুৎপর্ণা ! ঝর্ণা !!

Sunday, 27 January 2019

নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতা - ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি

ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি

দাদা নেই , দিদি নেই , ভাই নেই , বোন নেই
শুধু লেখাপড়া ছাড়া কোনো দিকে মন নেই
পিসি নেই , মাসি নেই , কাকা নেই , কাকী নেই
হাতে নিয়ে চানাচুর কিংবা পাটালি গুড়
জানালায় উঁকি মেরে কারো ডাকাডাকি নেই


মামা নেই , মামী নেই , জ্যাঠা নেই , জ্যেঠী নেই
ঝিমলি পটলা ভুতো খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাইবোন মিলেমিশে ছুটির দুপুরে বসে
রঙচটা তাস নিয়ে গাধা পিটোপিটি নেই
আড়ি দিয়ে ভাব করে ফের খিটিমিটি নেই


সকালে সবাই গিয়ে পুকুরে ঝাপানো নেই
দল বেঁধে মাঠে নেমে বিকেলে দাপানো নেই
দিঘি নেই বন নেই মাঠ কি উঠোন নেই
উঠোনে মায়ের হাতে লাগানো দোপাটি নেই
সারি সারি বাড়ি শুধু জল নেই মাটি নেই


ব্যাপারটা যত দেখি তত ভাবি ফিরে ফিরে
সবই যদি নেই নেই তাহলে রইল কিরে
আছে শুধু লেখাপড়া টেবিল চেয়ারে বসে
বইয়ের পাহাড় ভাঙা নেহাতই কপাল দোষে
দিনরাত লেখাপড়া তার থেকে ছুটি নেই
আছে খাতা পেন্সিল আর কিছ্ছুটি নেই


এর নাম বেঁচে থাকা একি জীবন নাকি
এতো এক যাঁতাকলে ঢুকে যাওয়া পাকাপাকি
এ কোন বাঁচার ধারা এ তো স্রেফ বেঁধে মারা
লোহার গারদে ঘেরা এ আমি কোথায় আছি
ঢের হল এই বার ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি ।

Tuesday, 22 January 2019

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা - লুকোচুরি

লুকোচুরি
রবীন্দ্রনাথ  ঠাকুর

আমি যদি দুষ্টুমি করে চাঁপার গাছে চাঁপা হয়ে ফুটি

ভোরের বেলা মাগো ডালের'পরে কচি পাতায় করি লুটোপুটি
তখন তুমি আমার কাছে হারো
তখন কি মা চিনতে আমায় পারো
তুমি ডাকো , ' খোকা , কোথায় ওরে ' আমি শুধু হাসি চুপটি করে

যখন তুমি থাকবে যে কাজ নিয়ে সবই আমি দেখবো নয়ন মেলে

স্নানটি করে চাঁপার তলা দিয়ে আসবে তুমি পীঠেতে চুল ফেলে
এখান দিয়ে পুজোর ঘরে যাবে
দূরের থেকে ফুলের গন্ধ পাবে
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে তোমার খোকার গায়ের গন্ধ আসে

দুপুরবেলা মহাভারত হাতে বসবে তুমি সবার খাওয়া হলে

গাছের ছায়া ঘরের জানালাতে পড়বে এসে তোমার পীঠে কোলে
আমি আমার ছোট্ট ছায়াখানি
দোলাবো তোর বইয়ের'পরে আনি
তখন তুমি বুঝতে পারবে না সে তোমার চোখে খোকার ছায়া ভাসে

সন্ধ্যেবেলায় প্রদীপখানি জ্বেলে যখন তুমি যাবে গোয়াল ঘরে

তখন আমি ফুলের খেলা খেলে টুপ করে মা পড়ব ভুঁয়ে ঝরে
আবার আমি তোমার খোকা হব
' গল্প বল ' , তোমায় গিয়ে কব
তুমি বলবে ,  'দুষ্টু , ছিলি কোথা ' আমি বলব , ' বলব না সে কথা '