Saturday 21 November 2020

সুকুমার রায়ের কবিতা - মেঘের খেয়াল

মেঘের খেয়াল
সুকুমার রায়


আকাশের ময়দানে বাতাসের ভরে, 
ছোট বড় সাদা কালো কত মেঘ চরে। 
কচি কচি থোপা থোপা মেঘেদের ছানা 
হেসে খেলে ভেসে যায় মেলে কচি ডানা। 
কোথা হতে কোথা যায় কোন্‌ তালে চলে, 
বাতাসের কানে কানে কত কথা বলে। 
বুড়ো বুড়ো ধাড়ি মেঘ ঢিপি হয়ে উঠে- 
শুয়ে ব'সে সভা করে সারাদিন জুটে। 
কি যে ভাবে চুপ্‌চাপ, কোন ধ্যানে থাকে, 
আকাশের গায়ে গায়ে কত ছবি আঁকে। 
কত আঁকে কত মোছে, কত মায়া করে, 
পলে পলে কত রং কত রূপ ধরে। 
জটাধারী বুনো মেঘ ফোঁস ফোঁস ফোলে, 
গুরুগুরু ডাক ছেড়ে কত ঝড় তোলে। 
ঝিলিকের ঝিকিমিকি চোখ করে কানা, 
হড়্‌ হড়্‌ কড়্‌ কড়্‌ দশদিকে হানা। 
ঝুল্‌ কালো চারিধার, আলো যায় ঘুচে, 
আকাশের যত নীল সব দেয় মুছে।

সুকুমার রায়ের কবিতা - হুঁকোমুখো হ্যাংলা

হুঁকোমুখো হ্যাংলা
সুকুমার রায়


হুঁকোমুখো হ্যাংলা বাড়ি তার বাংলা 
          মুখে তার হাসি নাই দেখেছ? 
নাই তার মানে কি?      কেউ তাহা জানে কি? 
          কেউ কভু তার কাছে থেকেছ? 

শ্যামাদাস মামা তার আফিঙের থানাদার, 
          আর তার কেহ নাই এ-ছাড়া - 
তাই বুঝি একা সে মুখখানা ফ্যাকাশে, 
          ব'সে আছে কাঁদ'-কাঁদ' বেচারা?

থপ্ থপ্ পায়ে সে নাচত যে আয়েসে, 
          গালভরা ছিল তার ফুর্তি, 
গাইতো সে সারা দিন 'সারে গামা টিমটিম্' 
          আহ্লাদে গদ-গদ মূর্তি। 

এই তো সে দুপ'রে বসে ওই উপরে, 
          খাচ্ছিল কাঁচকলা চটকে - 
এর মাঝে হল কি? মামা তার মোলো কি? 
          অথবা কি ঠ্যাং গেল মটকে? 

হুঁকোমুখো হেঁকে কয়, 'আরে দূর, তা তো নয়, 
          দেখছ না কিরকম চিন্তা? 
মাছি মারা ফন্দি এ যত ভাবি মন দিয়ে - 
          ভেবে ভেবে কেটে যায় দিনটা। 

বসে যদি ডাইনে, লেখে মোর আইনে - 
          এই ল্যাজে মাছি মারি ত্রস্ত; 
বামে যদি বসে তাও, নহি আমি পিছপাও, 
          এই ল্যাজে আছে তার অস্ত্র। 

যদি দেখি কোনো পাজি বসে ঠিক মাঝামাঝি 
          কি যে করি ভেবে নাহি পাই রে - 
ভেবে দ্যাখ একি দায় কোন্ ল্যাজে মারি তায় 
          দুটি বৈ ল্যাজ মোর নাই রে।

Tuesday 3 November 2020

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর 

পুর্ণেন্দু পত্রী



এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
কপালে তার গেরো
ঔষধ দিয়ে বাঁচায় কিনা
গরিব গুর্বোদেরও?

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
মগজটা কি ফাঁকা
যে যেখানে বিপন্ন তার
জোগানো চাই টাকা।

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
ভীষণ বাজে লোক
বলতো কিনা বিধবাদের
আবার বিয়ে হোক?

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
দেখতে এলেবেলে
চাইতো কিনা লেখাপড়া
শিখুক মেয়েছেলে?

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
দেমাকধারী ধাত্
সাহেব যদি জুতো দেখায়
বদলা তৎক্ষণাৎ।

এক যে ছিল বিদ্যাসাগর
বুদ্ধিশুদ্ধি কই?
লিখেই চলে লিখেই চলে
শিশুপাঠ্য বই।

Sunday 17 May 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা -- প্রাণ

প্রাণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে ,
মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই ।
এই সূর্যকরে এই পুষ্পিত কাননে
জীবন্ত হৃদয়-মাঝে যদি স্থান পাই !
ধরায় প্রাণের খেলা চিরতরঙ্গিত ,
বিরহ মিলন কত হাসি -অশ্রু-ময় ----
মানবের সুখে দুঃখে গাঁথিয়া সংগীত
যদি গো রচিতে পারি অমর- আলয় !
তা যদি না পারি , তবে বাঁচি যতকাল
তোমাদেরি মাঝখানে লভি যেন ঠাই ,
তোমরা তুলিবে বলে সকাল বিকাল
নব নব সংগীতের কুসুম ফুটাই ।
হাসিমুখে নিয়ো ফুল , তার পরে হায়
ফেলে দিয়ো ফুল , যদি সে ফুল শুকায় ।

Tuesday 12 May 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- কবির বয়স

কবির বয়স
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ওরে কবি , সন্ধ্যা হয়ে এল ,
কেশে তোমার ধরেছে যে পাক ---
বসে বসে উর্ধ্বপানে চেয়ে
শুনতেছ কি পরকালের ডাক ?
কবি কহে,সন্ধ্যা হল বটে,
শুনছি বসে লয়ে শ্রান্ত দেহ ,
এ পারে ওই পল্লীহতে যদি
আজো হঠা‌ৎ ডাকে আমায় কেহ।
যদি হোথায় বকুল-বনচ্ছায়ে
মিলন ঘটে তরুন-তরুণীতে ,
দুটি আঁখির পরে দুইটি আঁখি
মিলিতে চায় দুরন্ত সঙ্গীতে---
কে তাহাদের মনের কথা লয়ে
বীণার তারে তুলবে প্রতিধ্বনি
আমি যদি ভবের কূলে বসে
পরকালের ভালো-মন্দই গণি ?।

সন্ধ্যাতারা উঠে অস্তে গেল ,
চিতে নিবে গেল নদীর ধারে ,
কৃষ্ণপক্ষে হলুদবর্ণ চাঁদ
দেখা দিল বনের একটি পারে,
শৃগালসভা ডাকে উর্ধ্বরবে
পোড়ো বাড়ির শূণ্য আঙিনাতে-
এমন কালে কোনো গৃহত্যাগী
হেথায় যদি জাগতে আসে রাতে ,
জোড়হস্তে উর্ধ্বে তুলি মাথা
চেয়ে দেখে সপ্ত ঋষির পানে ,
প্রাণের কুলে আঘাত করে ধীরে
সুপ্তিসাগর শব্দবিহীন গানে ---
ত্রিভুবনের গোপন কথাখানি
কে জাগিয়ে তুলবে তাহার মনে
আমি যদি আমার মুক্তি নিয়ে
যুক্তি করি আপন গৃহকোণে ?।

কেশে আমার পাক ধরেছে বটে ,
তাহার পানে নজর এত কেন ?
পাড়ায় যত ছেলে এবং বুড়ো
সবার আমি একবয়সি জেনো ।
ওষ্ঠে কারো সরল সাদা হাসি
কারো হাসি আঁখির কোণে কোণে ,
কারো অশ্রু উছলে পড়ে যায়
কারো অশ্রু শুকায় মনে মনে ,
কেউ-বা থাকে ঘরের কোণে দোঁহে
জগৎ-মাঝে কেউ-বা হাঁকায় রথ ,
কেউ-বা মরে একলা ঘরের শোকে
জনারণ্যে কেউ-বা হারায় পথ ---
সবাই মোরে করেন ডাকাডাকি ,
কখন শুনি পরকালের ডাক ?
সবার আমি সমানবয়সি যে
চুলে আমার যত ধরুক পাক ।।

Saturday 9 May 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- দুঃসময়

দুঃসময়
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

যদিও সন্ধ্যা আসিছে মন্দ মন্থরে ,
সব সংগীত গেছে ইঙ্গিতে থামিয়া ,
যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে ,
যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া ,
মহা-আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে ,
দিক-দিগন্ত অবগুন্ঠনে ঢাকা ---
তবু বিহঙ্গ , ওরে বিহঙ্গ মোর ,
এখনি , অন্ধ , বন্ধ কোরো না পাখা ।।

এ নহে মুখর বনমর্মরগুঞ্জিত ,
এ যে অজাগর - গরজে সাগর ফুলিছে ।
এ নহে কুঞ্জ কুন্দকুসুমরঞ্জিত ,
ফেনহিল্লোল কলকল্লোলে দুলিছে ।
কোথা রে সে তীর ফুল পল্লবপুঞ্জিত ,
কোথা রে সে নীড় , কোথা আশ্রয় শাখা !
তবু বিহঙ্গ , ওরে বিহঙ্গ মোর ,
এখনি , অন্ধ , বন্ধ কোরো না পাখা ।।

এখনো সমুখে রয়েছে সুচির শর্বরী ,
ঘুমায় অরুণ সুদূর অস্ত- অচলে ।
বিশ্বজগৎ নিঃশ্বাসবায়ু সম্বরি
স্তব্ধ আসনে প্রহর গণিছে বিরলে ।
সবে দেখা দিল অকূল তিমির সন্তরি
দূর দিগন্তে ক্ষীণ শশাঙ্ক বাঁকা ।
ওরে বিহঙ্গ , ওরে ব্বিহঙ্গ মোর ,
এখনি , অন্ধ , বন্ধ কোরো না পাখা ।।

উর্ধ্ব আকাশে তারাগুলি মেলে অঙ্গুলি ,
ইঙ্গিত করি তোমা-পানে আছে চাহিয়া ।
নিম্নে গভীর অধীর মরণ উচ্ছলি
শত তরঙ্গে তোমা-পানে উঠে ধাইয়া ।
বহুদূর তীরে কারা ডাকে বাঁধি অঞ্জলি---
' এসো এসো ' সুর করুণ মিনতী-মাখা ।
ওরে বিহঙ্গ , ওরে বিহঙ্গ মোর ,
এখনি , অন্ধ , বন্ধ কোরো না পাখা ।।

ওরে ভয় নাই , নাই স্নেহমোহবন্ধন ---
ওরে আশা নাই , আশা শুধু মিছে ছলনা ।
ওরে ভাষা নাই , নাই বৃথা বসে ক্রন্দন ---
ওরে গৃহ নাই , নাই ফুলসেজ-রচনা ।
আছে শুধু পাখা , আছে মহানভ- অঙ্গন
উষা-দিশাহারা নিবিড়- তিমির -আঁকা ।
ওরে বিহঙ্গ , ওরে বিহঙ্গ মোর ,
এখনি , অন্ধ , বন্ধ কোরো না পাখা ।।

Sunday 3 May 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা--কৃপণ

কৃপণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আমি ভিক্ষা করে ফিরতেছিলেম গ্রামের পথে পথে,
তুমি তখন চলেছিলে তোমার স্বর্ণরথে ।
অপূর্ব এক স্বপ্নসম লাগতেছিল চক্ষে মম ---
কী বিচিত্র শোভা তোমার, কী বিচিত্র সাজ ।
আমি মনে ভাবতেছিলেম এ কোন্ মহারাজ ।।

আজি শুভক্ষণে রাত পোহালো, ভেবেছিলেম তবে
আজ আমারে দ্বারে দ্বারে ফিরতে নাহি হবে ।
বাহির হতে নাহি হতে কাহার দেখা পেলেম পথে ,
চলিতে রথ ধনধান্য ছড়াবে দুই ধারে ---
মুঠা মুঠা কুড়িয়ে নেব , নেব ভারে ভারে ।।

দেখি সহসা রথ থেমে গেল আমার কাছে এসে ,
আমার মুখ-পানে চেয়ে নামলে তুমি হেসে ।
দেখে মুখের প্রসন্নতা জুড়িয়ে গেল সকল ব্যথা ,
হেনকালে কিসের লাগি তুমি অকস্মাৎ
'আমায় কিছু দাও গো ' বলে বাড়িয়ে দিলে হাত ।।

মরি, এ কী কথা রাজাধিরাজ,' আমায় দাও গো কিছু ' -
শুনে ক্ষণকালের তরে রইনু মাথা - নিচু ।
তোমার কিবা অভাব আছে ভিখারি ভিক্ষুকের কাছে !
এ কেবল কৌতুকের বশে আমায় প্রবঞ্চনা ।
ঝুলি হতে দিলেম তুলে একটি ছোটো কণা ।।

যবে পাত্রখানি ঘরে এনে উজার করি ---- একি ,
ভিক্ষা-মাঝে একটি ছোটো সোনার কণা দেখি !
দিলেম যা রাজ-ভিখারিরে স্বর্ণ হয়ে এল ফিরে ---
তখন কাঁদি চোখের জলে দুটি নয়ন ভরে ,
তোমায় কেন দিইনি আমার সকল শূন্য করে ?।

Wednesday 19 February 2020

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর

বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

দিনের আলো নিবে এল ,
সুয্যি ডোবে ডোবে ।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে
চাঁদের লোভে লোভে ।
মেঘের উপর মেঘ করেছে ,
রঙের উপর রং ।
মন্দিরেতে কাসঁর ঘন্টা
বাজল ঠঙ্ ঠঙ্ ।
ও পারেতে বৃষ্টি এল ,
ঝাপসা গাছপালা ।
এ পারেতে মেঘের মাথায়
একশো মানিক জ্বালা !
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান ---
" বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ,
নদেয় এল বান ! "

আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা
কোথায় বা সীমানা ।
দেশে দেশে খেলে বেড়ায় ,
কেউ করে না মানা ।
কত নতুন ফুলের বনে
বিষ্টি দিয়ে যায় ।
পলে পলে নতুন খেলা
কোথায় ভেবে পায় ।
মেঘের খেলা দেখে কত
খেলা পড়ে মনে ----
কত দিনের লুকোচুরি
কত ঘরের কোনে ।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে
ছেলেবেলার গান ----
" বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ,
নদেয় এল বান ।"

মনে পড়ে , ঘরটি আলো
মায়ের হাসিমুখ ,
মনে পড়ে , মেঘের ডাকে
গুরু গুরু বুক ।
বিছানাটির একটি পাশে
ঘুমিয়ে আছে খোকা ,
মায়ের 'পরে দৌরাত্মি সে
না যায় লেখাজোকা ।
ঘরেতে দুরন্ত ছেলে
করে দাপাদাপি ।
বাইরেতে মেঘ ডেকে ওঠে ,
সৃষ্টি ওঠে কাঁপি ।
মনে পড়ে মায়ের মুখে
শুনেছিলাম গান ---
" বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ,
নদেয় এল বান ।"

মনে পড়ে সুয়োরানি
দুয়োরানির কথা ,
মনে পড়ে অভিমানী
কঙ্কাবতীর ব্যথা ।
মনে পড়ে ঘরের কোনে
মিটি মিটি আলো ,
চারিদিকে দেয়ালেতে
ছায়া কালো কালো ।
বাইরে কেবল জলের শব্দ
ঝুপ্ ঝুপ্ ঝুপ্ ----
দস্যি ছেলে গল্প শোনে
একেবারে চুপ ।
তারি সঙ্গে মনে পড়ে
মেঘলা দিনের গান ----
" বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ,
নদেয় এল বান ।"

কবে বিষ্টি পড়েছিল ,
বান এল সে কোথা ।
শিবঠাকুরের বিয়ে হল
কবেকার সে কথা ।
সেদিনও সে এমনিতরো
মেঘের ঘটাখানা ।
থেকে থেকে বিজুলি কি
দিতেছিল হানা ।
তিন কন্যে বিয়ে ক'রে
কী হল তার শেষে ।
না জানি কোন নদীর ধারে ,
না জানি কোন দেশে ,
কোন ছেলেরে ঘুম পাড়াতে
কে গাহিল গান ----
" বিষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর ,
নদেয় এল বান !"

Saturday 21 December 2019

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- আত্মসমর্পণ

আত্মসমর্পণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

তোমার আনন্দগানে আমি দিব সুর
যাহা জানি দু-একটি প্রীতিসুমধুর
অন্তরের ছন্দোগাথা ; দুঃখের ক্রন্দনে
বাজিবে আমার কন্ঠ বিষাদবিধুর
তোমার কন্ঠের সনে ; কুসুমে চন্দনে
তোমারে পূজিব আমি ; পরাব সিন্দূর
তোমার সীমান্তে ভালে ; বিচিত্র বন্ধনে
তোমারে বাঁধিব আমি , প্রমোদ সিন্ধুর
তরঙ্গেতে দিব দোলা নব ছন্দে তানে ।
মানব - আত্মার গর্ব আর নাহি মোর ,
চেয়ে তোর স্নিগ্ধশ্যাম মাতৃমুখ-পানে
ভালোবাসিয়াছি আমি ধূলিমাটি তোর ।
জন্মেছি যে মর্ত-কোলে ঘৃণা করি তারে
ছুটিব না স্বর্গ আর মুক্তি খুঁজিবারে ।

Thursday 19 December 2019

সুকুমার রায়ের কবিতা --- বোম্বাগড়ের রাজা

বোম্বাগড়ের রাজা
সুকুমার রায়


কেউ কি জানো সদাই কেন বোম্বাগড়ের রাজা ---
ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখে আমসত্ব ভাজা ?
রানীর মাথায় অষ্টপ্রহর কেন বালিশ বাঁধা ?
পাঁউরুটিতে পেরেক ঠোকে কেন রানীর দাদা ?
কেন সেথায় সর্দি হলে ডিগবাজি খায় লোকে ?
জোছনা রাতে সবাই কেন আলতা মাখায় চোখে ?
ওস্তাদেরা লেপ মুড়ি দেয় কেন মাথায় ঘাড়ে ?
টাকের পরে পডিতেরা ডাকের টিকিট মারে !
রাত্রে কেন ট্যাঁকঘড়িটা ডুবিয়ে রাখে ঘিয়ে ?
কেন রাজার বিছনা পাতে শিরীষ কাগজ দিয়ে ?
সভায় কেন চেঁচায় রাজা ' হুক্কা হুয়া ' বলে ?
মন্ত্রী কেন কলসি বাজায় বসে রাজার কোলে ?
সিংহাসনে ঝোলায় কেন ভাঙা বোতল শিশি ?
কুমড়ো নিয়ে ক্রিকেট খেলে কেন রাজার পিসি ?
রাজার খুড়ো নাচেন কেন হুঁকোর মালা পরে ?
এমন কেন ঘটছে তা কেউ বলতে পারো মোরে ?