কৃষ্ণকলি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি ,
কালো তারে বলে গায়ের লোক ।
মেঘলা দিনে দেখেছিলেম মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ- চোখ ।
ঘোমটা মাথায় ছিল না তার মোটে ,
মুক্তবেণী পীঠের পরে লোটে ।
কালো ? তা সে যতই কালো হোক ,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।।
ঘন মেঘে আঁধার হল দেখে
ডাকতেছিল শ্যামল দুটি গাই ,
শ্যামা মেয়ে ব্যস্ত ব্যাকুল পদে
কুটির হতে ত্রস্ত এল তাই ।
আকাশ-পানে হানি যুগল ভুরু
শুনলে বারেক মেঘের গুরুগুরু ।
কালো ? তা সে যতই কালো হোক ,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।।
পুবে বাতাস এল হঠাৎ ধেয়ে ,
ধানের ক্ষেতে খেলিয়ে গেল ঢেউ ।
আলের ধারে দাঁড়িয়েছিলেম একা ,
মাঠের মাঝে আর ছিল না কেউ ।
আমার পানে দেখলে কিনা চেয়ে ,
আমিই জানি আর জানে সেই মেয়ে ।
কালো ? তা সে যতই কালো হোক ,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।।
এমনি ক'রে কালো কাজল মেঘ
জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে ঈশান কোনে ।
এমনি ক'রে কালো কোমল ছায়া
আষাঢ় মাসে নামে তমাল-বনে ।
এমনি ক'রে শ্রাবণ-রজনীতে
হঠাৎ খুশি ঘনিয়ে আসে চিতে ।
কালো ? তা সে যতই কালো হোক ,
দেখেছি তার কালোহরিণ-চোখ ।।
কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি ,
আর যা বলে বলুক অন্য লোক ।
দেখেছিলেম ময়নাপাড়ার মাঠে
কালো মেয়ের কালো হরিণ-চোখ ।।
মাথার 'পরে দেয়নি তুলে বাস ,
লজ্জা পাবার পায়নি অবকাশ ।
কালো ? তা সে যতই কালো হোক ,
দেখেছি তার কালো হরিণ-চোখ ।।