Wednesday, 27 February 2019

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা --- ভোরাই

ভোরাই
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত


ভোর হল রে, ফর্সা হ’ল, দুল্ ল ঊষার ফুল-দোলা !
আন্ কো আলোয় যায় দেখা ওই পদ্মকলির হাই-তোলা !
জাগলো সাড়া নিদ্ মহলে,
 অ-থই নিথর পাথার-জলে–
আলপনা দ্যায় আল্ তো বাতাস,ভোরাই সুরে মন ভোলা !

ধানের ক্ষেতের সব্ জে কে আজ সোহাগ দিয়ে ছুপিয়েছে !
সেই সোহাগের একটু পরাগ টোপর-পানায় টুপিয়েছে !
আলোর মাঠের কোল ভরেছে,
 অপরাজিতার রং ধরেছে–
নীল-কাজলের কাজল-লতা আস্ মানে চোখ ডুবিয়ে যে |

কল্পনা আজ চলছে উড়ে হাল্ কা হাওয়ায় খেল্ খেলে !
পাপ্ ড়ি-ওজন পান্ সি কাদের সেই হাওয়াতেই পালপেলে !
মোতিয়া মেঘের চামর পিঁজে 
পায়রা ফেরে আলোয় ভিজে
পদ্মফুলের অঞ্জলি যে আকাশ-গাঙে যায় ঢেলে !

পূব্ গগনে থির নীলিমা ভুলিয়েছে মন ভুলিয়েছে !
পশ্চিমে মেঘ মেলছে জটা–সিংহ কেশর ফুলিয়েছে !
হাঁস চলেছে আকাশ-পথে,
 হাসছ কারা পুষ্প-রথে,–
রামধনু-রং আঁচলা তাদের আলো-পাথার দুলিয়েছে !

শিশির-কণায় মানিক ঘনায়, দূর্বাদলে দীপ জ্বলে !
শীতল শিথিল শিউলী-বোটায় সুপ্ত শিশুর ঘুম টলে |
আলোর জোয়ার উঠছে বেড়ে 
গন্ধ-ফুলের স্বপন কেড়ে,
বন্ধ চোখের আগল ঠেলে রঙের ঝিলিক্ ঝল্ মলে !

নীলের বিথার নীলার পাথার দরাজ এ যে দিল্ খোলা !
আজ কি উচিত ডঙ্কা দিয়ে ঝাণ্ডা নিয়ে ঝড় তোলা ?
ফির্ ছে ফিঙে দুলিয়ে ফিতে; 
বোল ধরেছে বুল্ বুলিতে !
গুঞ্জনে আর কূজন-গীতে হর্ষে ভূবন হর্ বোলা !

সুকুমার রায়ের কবিতা --- আবোল-তাবোল

আবোল-তাবোল
সুকুমার রায়ের 

আয়রে ভোলা খেয়াল খোলা
           স্বপনদোলা নাচিয়ে আয়,
আয়রে পাগল আবোল তাবোল
           মত্ত মাদল বাজিয়ে আয় ৷
আয় যেখানে ক্ষ্যাপার গানে
           নাইকো মানে নাইকো সুর,
আয়রে যেথায় উধাও হাওয়ায়
           মন ভেসে যায় কোন্ সুদূর ৷
আয় ক্ষ্যাপা–মন ঘুচিয়ে বাঁধন
           জাগিয়ে নাচন তাধিন্ ধিন্,
আয় বেয়াড়া সৃষ্টিছাড়া
           নিয়মহারা হিসাব–হীন ৷
আজগুবি চাল বেঠিক বেতাল
           মাতবি মাতাল রঙ্গেতে,
আয়রে তবে ভুলের ভবে
           অসম্ভবের ছন্দেতে ৷৷

Tuesday, 26 February 2019

সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা --- দূরের পাল্লা

দূরের পাল্লা
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত
          
                  

ছিপখান তিন-দাঁড় -
তিনজন মাল্লা
চৌপর দিন-ভোর
দ্যায় দূর-পাল্লা!
                    পাড়ময় ঝোপঝাড়
                 জঙ্গল-জঞ্জাল,
                  জলময় শৈবাল
                        পান্নার টাঁকশাল |
কঞ্চির তীর-ঘর
ঐ-চর জাগছে,
বন-হাঁস ডিম তার
শ্যাওলায় ঢাকছে|
         চুপ চুপ - ওই ডুব
         দ্যায় পান্ কৌরি
         দ্যায় ডুব টুপ টুপ
         ঘোমটার বৌটি!
ঝকঝক কলসীর
বক্ বক্ শোন্ গো
ঘোমটার ফাঁক বয়
মন উন্মন গো|
                তিন-দাঁড় ছিপখান
         মন্থর যাচ্ছে,
              তিনজন মাল্লায়
                  কোন গান গাচ্ছে?
রূপশালি ধান বুঝি
এইদেশে সৃষ্টি,
ধুপছায়া যার শাড়ী
তার হাসি মিষ্টি|
                মুখখানি মিষ্টিরে
                 চোখদুটি ভোমরা
                      ভাব-কদমের - ভরা
                     রূপ দেখ তোমরা !
ময়নামতীর জুটি
ওর নামই টগরী,
ওর পায়ে ঢেউ ভেঙে
জল হোলো গোখরী!
                        ডাক পাখী ওর লাগি'
                 ডাক ডেকে হদ্দ,
                        ওর তরে সোঁত-জলে
                    ফুল ফোটে পদ্ম|
ওর তরে মন্থরে
নদ হেথা চলছে,
জলপিপি ওর মৃদু
বোল বুঝি বোলছে|
                দুইতীরে গ্রামগুলি
               ওর জয়ই গাইছে,
                গঞ্জে যে নৌকা সে
               ওর মুখই চাইছে|
আটকেছে যেই ডিঙা
চাইছে সে স্পর্শ,
সঙ্কটে শক্তি ও
সংসারে হর্ষ|
                     পান বিনে ঠোঁট রাঙা
                      চোখ কালো ভোমরা,
                   রূপশালী-ধান-ভানা
                 রূপ দেখ তোমরা
*        *        *        *
   
পান সুপারি! পান সুপারি!
এইখানেতে শঙ্কা ভারি,
পাঁচ পীরেরই শীর্ণি মেনে
চলরে টেনে বৈঠা হেনে;

বাঁক সমুখে, সামনে ঝুঁকে
বাঁয় বাঁচিয়ে ডাইনে রুখে
বুক দে টানো, বইটা হানো -
সাত সতেরো কোপ কোপানো|

হাড়-বেরুনো খেজুরগুলো
ডাইনী যেন ঝামর-চুলো
নাচতে ছিল সন্ধ্যাগমে
লোক দেখে কি থমকে গেল|

জমজমাটে জাঁকিয়ে ক্রমে
রাত্রি এল রাত্রি এল|

ঝাপসা আলোয় চরের ভিতে
ফিরছে কারা মাছের পাছে,
পীর বদরের কুদরতিতে
নৌকা বাঁধা হিজল-গাছে|
*        *        *        *
    
আর জোর দেড় ক্রোশ -
জোর দের ঘন্টা,
টান ভাই টান সব -
নেই উত্ণ্ঠা|
                       চাপ চাপ শ্যাওলার
                      দ্বীপ সব সার সার,
                      বৈঠৈর ঘায়ে সেই
                    দ্বীপ সব নড়ছে,
         ভিল্ ভিলে হাঁস তায়
         জল-গায় চড়ছে|
ওই মেঘ জমছে,
চল্ ভাই সমঝে,
                       গান গাও দাও শিশ,
                      বকশিশ! বকশিশ!
      খুব জোর ডুব-জল
         বয় স্রোত ঝিরঝির,
        নেই ঢেউ কল্লোল,
       নয় দূর নয় তীর|
              নেই নেই শঙ্কা,
              চল্ সব ফুর্তি,
               বকশিশ টঙ্কা,
                 বকশিশ ফুর্তি|
         ঘোর-ঘোর সন্ধ্যায়,
         ঝাউ-গাছ দুলছে,
         ঢোল-কলমীর ফুল
         তন্দ্রায় ঢুলছে|
                      লকলক শর-বন
                  বক তায় মগ্ন,
                        চুপচাপ চারদিক -
                  সন্ধ্যার লগ্ন |
         চারদিক নিঃসাড়,
         ঘোর-ঘোর রাত্রি,
         ছিপ-খান তিন-দাঁড়,
         চারজন যাত্রি|
*        *        *        *
   
জড়ায় ঝাঁঝি দাঁড়ের মুখে
ঝাউয়ের বীথি হাওয়ায় ঝুঁকে
ঝিমায় বুঝি ঝিঁঝিঁর গানে -
স্বপন পানে পরাণ টানে|

        তারায় ভরা আকাশ ওকি
        ভুলোয় পেয়ে ধূলোর পরে
        লুটিয়ে প'ল আচম্বিতে
        কুহক-মোহ-মন্ত্র-ভরে!

*        *        *        *

কেবল তারা! কেবল তারা!
শেষের শিরে মানিক পারা,
হিসাব নাহি সংখ্যা নাহি
কেবল তারা যেথায় চাহি|
                  কোথায় এল নৌকাখানা
                    তারার ঝড়ে হই রে কাণা,
                    পথ ভুলে কি এই তিমিরে
                       নৌকা চলে আকাশ চিরে!
জ্বলছে তারা! নিভছে তারা!
মন্দাকিনীর মন্দ সোঁতায়,
যাচ্ছে ভেসে যাচ্ছে কোথায়
জোনাক যেন পন্থা-হারা|
                          তারায় আজি ঝামর হাওয়া-
                          ঝামর আজি আঁধার রাতি,
                      অগুনতি অফুরান তারা
                              জ্বালায় যেন জোনাক-বাতি|
কালো নদীর দুই কিনারে
কল্পতরু কুঞ্জ কি রে?
ফুল ফুটেছে ভারে ভারে -
ফুল ফুটেছে মাণিক হীরে|
                           বিনা হাওয়ায় ঝিলমিলিয়ে
                           পাপড়ি মেলে মাণিক-মালা;
                        বিনি নাড়ায় ফুল ঝরিছে
                               ফুল পড়িছে জোনাক জ্বালা|
চোখে কেমন লগছে ধাঁধা -
লাগছে যেন কেমন পারা,
তারাগুলোই জোনাক হল
কিম্বা জোনাক হল তারা|
                        নিথর জলে নিজের ছায়া
                            দেখছে আকাশ ভরা তারায়,
                         ছায়া-জোনাক আলিঙ্গিতে
                             জলে জোনাক দিশে হারায়|
দিশে হারায় যায় ভেসে যায়
স্রোতের টানে কোন্ দেশে রে?
মরা গাঙ আর সুর-সরিত্
এক হয়ে যেথায় মেশে রে!
                                কোথায় তারা ফুরিয়েছে, আর
                             জোনাক কোথা হয় সুরু যে
                          নেই কিছুরই ঠিক ঠিকানা
                           চোখ যে আলা রতন উঁছে|
আলেয়াগুলো দপদপিয়ে
জ্বলছে নিবে, নিবছে জ্বলে',
উল্কোমুখী জিব মেলিয়ে
চাটছে বাতাস আকাশ-কোলে!
                           আলেয়া-হেন ডাক-পেয়াদা
                            আলেয়া হতে ধায় জেয়াদা
                           একলা ছোটে বন বাদাড়ে
                               ল্যাম্পো-হাতে লকড়ি ঘাড়ে;
সাপ মানে না, বাঘ জানে না,
ভূতগুলো তার সবাই চেনা,
ছুটছে চিঠি পত্র নিয়ে
রণরণিয়ে হনহনিয়ে|
                                  বাঁশের ঝোপে জাগছে সাড়া,
                                  কোল্-কুঁজো বাঁশ হচ্ছে খাড়া,
                                 জাগছে হাওয়া জলের ধারে,
                                চাঁদ ওঠেনি আজ আঁধারে!
শুকতারাটি আজ নিশীথে
দিচ্ছে আলো পিচকিরিতে,
রাস্তা এঁকে সেই আলোতে
ছিপ চলেছে নিঝুম স্রোতে|
                               ফিরছে হাওয়া গায় ফুঁ-দেওয়া,
                        মাল্লা মাঝি পড়ছে থকে;
                             রাঙা আলোর লোভ দেখিয়ে
                         ধরছে কারা মাছগুলোকে!
চলছে তরী চলছে তরী -
আর কত পথ? আর ক'ঘড়ি?
এই যে ভিড়াই, ওই যে বাড়ী,
ওই যে অন্ধকারের কাঁড়ি -
                     ওই বাঁধা-বট ওর পিছন্
                           দেখছ আলো? ঐতো কুঠি
                        ঐখানেতে পৌঁছে দিলেই
                             রাতের মতন আজকে ছুটি|
ঝপ ঝপ তিনখান
দাঁড় জোর চলছে,
তিনজন মাল্লার
হাত সব জ্বলছে;
                 গুরগুর মেঘ সব
                  গায় মেঘ মল্লার,
                   দূর-পাল্লার শেষ
                   হাল্লাক্ মাল্লার!

Monday, 25 February 2019

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে


নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে,
হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে
হৃদয়ে রয়েছ গোপনে।
বাসনা বসে মন অবিরত,
ধায় দশ দিশে পাগলের মতো।
স্থির আঁখি তুমি ক্ষরণে শতত
জাগিছ শয়নে স্বপনে।

সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।

তুমি ছাড়া কেহ সাথি নাই আর
সমুখে অনন্ত জীবন বিস্তার,
কাল পারাপার করিতেছ পার
কেহ নাহি জানে কেমনে।

জানি শুধু তুমি আছ তাই আছি
তুমি প্রাণময় তাই আমি বাঁচি,
যতো পাই তোমায় আরো ততো যাচি
যতো জানি ততো জানি নে।

জানি আমি তোমায় পাবো নিরন্তন
লোক লোকান্তরে যুগ যুগান্তর
তুমি আর আমি, মাঝে কেহ নাই
কোনো বাঁধা নাই ভুবনে।

নয়ন তোমারে পায় না দেখিতে
রয়েছ নয়নে নয়নে।

Saturday, 23 February 2019

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- সোনার তরী

সোনার তরী
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 

গগনে গরজে মেঘ, ঘন বরষা।
কূলে একা বসে আছি, নাহি ভরসা।
রাশি রাশি ভারা ভারা
ধান কাটা হল সারা,
ভরা নদী ক্ষুরধারা খরপরশা।
কাটিতে কাটিতে ধান এল বরষা।
একখানি ছোটো খেত, আমি একেলা,
চারি দিকে বাঁকা জল করিছে খেলা।
পরপারে দেখি আঁকা
তরুছায়ামসীমাখা
গ্রামখানি মেঘে ঢাকা প্রভাতবেলা--
পারেতে ছোটো খেত, আমি একেলা।
গান গেয়ে তরী বেয়ে কে আসে পারে,
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ভরা-পালে চলে যায়,
কোনো দিকে নাহি চায়,
ঢেউগুলি নিরুপায় ভাঙে দু-ধারে--
দেখে যেন মনে হয় চিনি উহারে।
ওগো, তুমি কোথা যাও কোন্‌ বিদেশে,
বারেক ভিড়াও তরী কূলেতে এসে।
যেয়ো যেথা যেতে চাও,
যারে খুশি তারে দাও,
শুধু তুমি নিয়ে যাও ক্ষণিক হেসে
আমার সোনার ধান কূলেতে এসে।
যত চাও তত লও তরণী-'পরে।
আর আছে?-- আর নাই, দিয়েছি ভরে।
এতকাল নদীকূলে
যাহা লয়েছিনু ভুলে
সকলি দিলাম তুলে থরে বিথরে--
এখন আমারে লহ করুণা করে।
ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই-- ছোটো সে তরী
আমারি সোনার ধানে গিয়েছে ভরি।
শ্রাবণগগন ঘিরে
ঘন মেঘ ঘুরে ফিরে,
শূন্য নদীর তীরে  রহিনু পড়ি--
যাহা ছিল নিয়ে গেল সোনার তরী।


সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা --- পালকির গান

পালকির গান
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

পালকি চলে!
পালকি চলে!
গগন-তলে
আগুন জ্বলে!
স্তব্ধ গাঁয়ে
আদুল্ গায়ে
যাচ্ছে কারা
রৌদ্রে সারা

ময়রা মুদি
চক্ষু মুদি'
পাটায় ব'সে
ঢুলছ ক'ষে!
দুধের চাঁছি
শুকছে মাছি,_
উড়ছে কতক
ভন্ ভনিয়ে।_
আসছে কা'রা
হন্ হনিয়ে?
হাটের শেষে
রুক্ষ বেশে
ঠিক্ দুপুরে
ধায় হাটুরে!

কুকুরগুলো
শুঁকছে ধুলো,_
ধুঁকছে কেহ
ক্লান্ত দেহ।
ঢুকছে গরু
দোকান-ঘরে,
আমের-গন্ধে
আমোদ করে!

পালকি চলে,
পালক চলে_
দুল্কি চালে
নৃত্য তালে!
ছয় বেহারা,_
জোয়ান তারা,_
গ্রাম ছাড়িয়ে
আগ্ বাড়িয়ে
নামলো মাঠে
তামার টাটে!
তপ্ত তামা;_
যায় না থামা,_
উঠ্ছে আলে
নামছে গাঢ়ায়,_
পালকি দোলে
ঢেউয়ের নাড়ায়!
ঢেউয়ের দোলে
অঙ্গ দোলে!

মেঠো জাহাজ
সামনে বাড়ে,_
ছয় বেহারার
চরণ-দাঁড়ে!

কাজ্লা সবুজ
কাজল প'রে
পাটের জমী
ঝিমায় দূরে!
ধানের জমী
প্রায় সে নেড়া,
মাঠের বাটে
কাঁটার বেড়া!

'সামাল্' হেঁকে
চলল বেঁকে
ছয় বেহারা,_
মর্দ্দ তারা!
জোর হাঁটুনি
খাটনি ভারি;
মাঠের শেষে
তালের সারি।

তাকাই দূরে,
শূন্যে ঘুরে
চিল্ ফুকারে
মাঠের পারে।
গরুর বাথান,_
গোয়াল-থানা,_
ওই গো! গাঁয়ের
ওই সীমানা!

বৈরাগী সে,_
কণ্ঠী বাঁধা,_
ঘরের কাঁথে
লেপছে কাদা
মটকা থেকে
চাষার ছেলে
দেখছে, ডাগর
চক্ষু মেলে!
দিচ্ছে চালে
পোয়াল গুছি;
বৈরাগীটির
মূর্ত্তি শুচি।

পরু জাপতি
হলুদ বরণ,_
শশার ফুলে
রাখ্ছে চরণ!
কার বহুড়ি
বাসন মাজে?_
পুকুর ঘাটে 
ব্যস্ত কাজে,_
এঁটো হাতেই
হাতের পোঁছায়
গায়ের মাথায়
কাপড় গোছায়!

পালক দেখে
আসছে ছুটে
ন্যাংটা খোকা,_
মাথায় পুঁটে!

পোড়ার আওয়াজ
যাচ্ছে শোনা,_
খোড়ো ঘরে
চাঁদের কোণা!
পাঠশালাটি
দোকান-ঘরে,
গুরুমশাই
দোকান করে!
পোড়া ভিটের
পোতার 'পরে
শালিক নাচে
ছাগল চড়ে।

গ্রামের শেষে
অশথ-তলে
বুনোর ডেরায়
চুল্লী জ্বলে;
টাটকা কাঁচা
শাল-পাতাতে
উড়ছে ধোঁয়া
ফ্যান্সা ভাতে।

গ্রামের সীমা
ছাড়িয়ে, ফিরে
পাল্কী মাঠে
নামলো ধীরে;
আবার মাঠে,_
তামার টাটে,_
কেউ ছোটে, কেউ
কষ্টে হাঁটে;
মাঠের মাটি
রৌদ্রে ফাটে,
পালকি মাতে
আপন নাটে!

শঙ্খচিলের
সঙ্গে, যেচে_
পাল্লা দিয়ে
মেঘ চলেছে!
তাতারসির
তপ্ত রসে
বাতাস সাঁতার
দেয় হরষে!
গঙ্গাফড়িং
লাফিয়ে চলে,
বাঁধের দিকে
সূর্য্য ঢলে।

পালকি চলে রে!
অঙ্গ ঢলে রে!
আর দেরী কত?
আরো কত দূর?
''আর দূর কি গো?
বুড়ো-শিবপুর
ওই আমাদের;
ওই হাটতলা,
ওরি পেছুখানে
ঘোষেদের গোলা।''

পালকি চলে রে,
অঙ্গ টলে রে;
সূর্য্য ঢলে,
পালকি চলে!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকরের কবিতা --- নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ

 নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


আজি এ প্রভাতে রবির কর

কেমনে পশিল প্রানের পর,
কেমনে পশিল গুহার আধারে প্রভাতপাখির গান ।
না জানি কেনরে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।
জাগিয়া উঠেছে বারি,
ওরে প্রাণের আবেগ রূধিয়া রাখিতে নারি
থর থর করি কাপিছে ভুধর,
শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে,
ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল
গরজি উঠিছে দারুন রোষে।
হেথায় হেথায় পাগলের প্রায়
ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায় -
বাহিরিতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার।
কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন,
চারিদিকে তার বাধন কেন ।
ভাঙরে হৃদয়, ভাঙরে বাঁধন,
সাধ রে আজিকে প্রাণের সাধন,
লহরীর পরে লহরী তুলিয়া
আঘাতের পরে আঘাত কর্।
মাতিয়া যখন উঠেছে পরান
কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ ।
উথলি যখন উঠেছে বাসনা
জগতে তখন কিসের ডর ।

আমি চালিব করূণাধারা ,

আমি ভাঙিব পাষাণকারা,
আমি জগত প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া
আকুল পাগল-পারা।
কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া
রামধেনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া,
রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি।
শিখর হইতে শিখরে ছুটিব,
ভুধর হইতে ভূধরে লুটিব,
হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি।
এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রান আহে মোর,
এত সুখ আছে, এত সাধ আছে - প্রাণ হয়ে আছে ভোর।।


কী জানি কী হল আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ -

দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান ।
ওরে, চারিদিকে মোর
এ কী কারাগার ঘোর -
ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর্ ।
ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি ,
এসেছে রবির কর ।।

Friday, 22 February 2019

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- ফাল্গুন

ফাল্গুন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ফাল্গুনে বিকশিত
কাঞ্চন ফুল,
ডালে ডালে পুঞ্জিত
আম্রমুকুল।
চঞ্চল মৌমাছি
গুঞ্জরি গায়,
বেণুবনে মর্মরে
দক্ষিণবায়।
স্পন্দিত নদীজল
ঝিলিমিলি করে,
জ্যোৎস্নার ঝিকিমিকি
বালুকার চরে।
নৌকা ডাঙায় বাঁধা,
কাণ্ডারী জাগে,
পূর্ণিমারাত্রির
মত্ততা লাগে।
খেয়াঘাটে ওঠে গান
অশ্বত্থতলে,
পান্থ বাজায়ে বাঁশি
আন্‌মনে চলে।
ধায় সে বংশীরব
বহুদূর গাঁয়,
জনহীন প্রান্তর
পার হয়ে যায়।
দূরে কোন্‌ শয্যায়
একা কোন্‌ ছেলে
বংশীর ধ্বনি শুনে
ভাবে চোখ মেলে--
যেন কোন্‌ যাত্রী সে,
রাত্রি অগাধ,
জ্যোৎস্নাসমুদ্রের
তরী যেন চাঁদ।
চলে যায় চাঁদে চ'ড়ে
সারা রাত ধরি,
মেঘেদের ঘাটে ঘাটে
ছুঁ'য়ে যায় তরী।
রাত কাটে, ভোর হ|য়,
পাখি জাগে বনে--
চাঁদের তরণী ঠেকে
ধরণীর কোণে।

Thursday, 21 February 2019

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
                            


আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

ছেলেহারা শত মায়ের অশ্রু গড়ায়ে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি।

আমার সোনার দেশের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী
আমি কি ভুলিতে পারি ।

জাগো নাগিনীরা জাগো নাগিনীরা জাগো কালবোশেখীরা
শিশু হত্যার বিক্ষোভে আজ কাঁপুক বসুন্ধরা,
দেশের সোনার ছেলে খুন করে রোখে মানুষের দাবী
দিন বদলের ক্রান্তিলগ্নে তবু তোরা পার পাবি?
না, না, না, না খুন রাঙা ইতিহাসে শেষ রায় দেওয়া তারই
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

সেদিনও এমনি নীল গগনের বসনে শীতের শেষে
রাত জাগা চাঁদ চুমো খেয়েছিল হেসে;
পথে পথে ফোটে রজনীগন্ধা অলকানন্দা যেন,
এমন সময় ঝড় এলো এক ঝড় এলো খ্যাপা বুনো।।

সেই আঁধারের পশুদের মুখ চেনা,
তাহাদের তরে মায়ের, বোনের, ভায়ের চরম ঘৃণা
ওরা গুলি ছোঁড়ে এদেশের প্রাণে দেশের দাবীকে রোখে
ওদের ঘৃণ্য পদাঘাত এই সারা বাংলার বুকে
ওরা এদেশের নয়,
দেশের ভাগ্য ওরা করে বিক্রয়
ওরা মানুষের অন্ন, বস্ত্র, শান্তি নিয়েছে কাড়ি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

তুমি আজ জাগো তুমি আজ জাগো একুশে ফেব্রুয়ারি
আজো জালিমের কারাগারে মরে বীর ছেলে বীর নারী
আমার শহীদ ভায়ের আত্মা ডাকে
জাগো মানুষের সুপ্ত শক্তি হাটে মাঠে ঘাটে বাটে
দারুণ ক্রোধের আগুনে আবার জ্বালবো ফেব্রুয়ারি
একুশে ফেব্রুয়ারি একুশে ফেব্রুয়ারি।।

Wednesday, 20 February 2019

খুকী ও কাঠবেড়ালি

খুকী ও কাঠবেড়ালি

কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি! পেয়ারা তুমি খাও?
গুড়-মুড়ি খাও? দুধ-ভাত খাও? বাতাবি-নেবু? লাউ?
বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর-ছানা? তাও-
ডাইনি তুমি হোঁৎকা পেটুক,
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
বাতাবি-নেবু সকলগুলো
একলা খেলে ডুবিয়ে নুলো!
তবে যে ভারি ল্যাজ উঁচিয়ে পুটুস পাটুস চাও?
ছোঁচা তুমি! তোমার সঙ্গে আড়ি আমার! যাও!

কাঠবেড়ালি! বাঁদরীমুখী! মারবো ছুঁড়ে কিল?
দেখবি তবে? রাঙাদাকে ডাকবো? দেবে ঢিল!
পেয়ারা দেবে? যা তুই ওঁচা!
তাই তোর নাকটি বোঁচা!
হুতমো-চোখী! গাপুস গুপুস
একলাই খাও হাপুস হুপুস!
পেটে তোমার পিলে হবে! কুড়ি-কুষ্টি মুখে!
হেই ভগবান! একটা পোকা যাস পেটে ওর ঢুকে!
ইস! খেয়ো না মস্তপানা ঐ সে পাকাটাও!
আমিও খুবই পেয়ারা খাই যে! একটি আমায় দাও!

কাঠবেড়ালি! তুমি আমার ছোড়দি’ হবে? বৌদি হবে? হুঁ!
রাঙা দিদি? তবে একটা পেয়ারা দাও না! উঃ!
এ রাম! তুমি ন্যাংটা পুঁটো?
ফ্রকটা নেবে? জামা দুটো?
আর খেয়ো না পেয়ার তবে,
বাতাবি-নেবুও ছাড়তে হবে!
দাঁত দেখিয়ে দিচ্ছ যে ছুট? অ’মা দেখে যাও!-
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!


Tuesday, 19 February 2019

সুকুমার রায়ের কবিতা --- ষোলোআনাই মিছে

ষোলোআনাই মিছে
সুকুমার রায়

বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই চড়ি সখের বোটে,
মাঝিরে কন, ”বলতে পারিস সূর্যি কেন ওঠে?
চাঁদটা কেন বাড়ে কমে? জোয়ার কেন আসে?”
বৃদ্ধ মাঝি অবাক হয়ে ফ্যালফ্যলিয়ে হাসে।
বাবু বলেন, ”সারা জীবন মরলিরে তুই খাটি,
জ্ঞান বিনা তোর জীবনটা যে চারি আনাই মাটি।”

খানিক বাদে কহেন বাবু, ”বলতো দেখি ভেবে
নদীর ধারা কেমনে আসে পাহাড় থেকে নেবে?
বলতো কেন লবণপোড়া সাগর ভরা পানি?”
মাঝি সে কয়, ”আরে মশাই অত কি আর জানি?”
বাবু বলেন, ”এই বয়সে জানিস নেও তা কি
জীবনটা তোর নেহাৎ খেলো, অষ্ট আনাই ফাঁকি!”

আবার ভেবে কহেন বাবু, ” বলতো ওরে বুড়ো,
কেন এমন নীল দেখা যায় আকাশের ঐ চুড়ো?
বলতো দেখি সূর্য চাঁদে গ্রহণ লাগে কেন?”
বৃদ্ধ বলে, ”আমায় কেন লজ্জা দেছেন হেন?”
বাবু বলেন, ”বলব কি আর বলব তোরে কি তা,-
দেখছি এখন জীবনটা তোর বারো আনাই বৃথা।”

খানিক বাদে ঝড় উঠেছে, ঢেউ উঠেছে ফুলে ,
বাবু দেখেন, নৌকাখানি ডুবলো বুঝি দুলে !
মাঝিরে কন, ” একি আপদ! ওরে ও ভাই মাঝি,
ডুবলো নাকি নৌকা এবার? মরব নাকি আজি?”
মাঝি শুধায়, ”সাঁতার জানো?”- মাথা নাড়েন বাবু,
মূর্খ মাঝি বলে, ”মশাই, এখন কেন কাবু?
বাঁচলে শেষে আমার কথা হিসেব করো পিছে,
তোমার দেখি জীবন খানা ষোল আনাই মিছে!”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- আত্মত্রাণ

আত্মত্রাণ
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

বিপদে মোরে রক্ষা করো
এ নহে মোর প্রার্থনা,
বিপদে আমি না যেন করি ভয়।
দুঃখতাপে ব্যথিত চিতে
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
দুঃখে যেন করিতে পারি জয়।
সহায় মোর না যদি জুটে
নিজের বল না যেন টুটে,
সংসারেতে ঘটিলে ক্ষতি
লভিলে শুধু বঞ্চনা
নিজের মনে না যেন মানি ক্ষয়।
আমারে তুমি করিবে ত্রাণ
এ নহে মোর প্রার্থনা,
তরিতে পারি শকতি যেন রয়।
আমার ভার লাঘব করি
নাই বা দিলে সান্ত্বনা,
বহিতে পারি এমনি যেন হয়।
নম্রশিরে সুখের দিনে
তোমারি মুখ লইব চিনে,
দুখের রাতে নিখিল ধরা
যেদিন করে বঞ্চনা
তোমারে যেন না করি সংশয়।

Monday, 18 February 2019

গীতবিতান --- তোমার পতাকা যারে দাও

তোমার পতাকা যারে দাও

তোমার পতাকা যারে দাও তারে বহিবারে দাও শকতি ।
তোমার সেবার মহান দুঃখ সহিবারে দাও ভকতি।।
আমি তাই চাই ভরিয়া পরান দুঃখের সাথে দুঃখের ত্রাণ,
তোমার হাতের বেদনার দান এড়ায়ে চাহি না মুকতি ।
দুখ হবে মম মাথার ভূষণ সাথে যদি দাও ভকতি।।
যত দিতে চাও কাজ দিয়ো যদি তোমারে না দাও ভুলিতে,
অন্তর যদি জড়াতে না দাও জালজঞ্জালগুলিতে ।
বাঁধিয়ো আমায় যত খুশি ডোরে মুক্ত রাখিয়ো তোমা-পানে মোরে,
ধুলায় রাখিয়ো পবিত্র ক'রে তোমার চরণধূলিতে-
ভুলায়ে রাখিয়ো সংসারতলে, তোমারে দিয়ো না ভুলিতে ।।
যে পথে ঘুরিতে দিয়েছ ঘুরিব- যাই যেন তব চরণে,
সব শ্রম যেন বহি লয় মোরে সকলশ্রান্তিহরণে ।
দুর্গম পথ এ ভবগহন, কত ত্যাগ শোক বিরহদহন-
জীবনে মৃত্যু করিয়া বহন প্রাণ পাই যে মরণে-
সন্ধ্যাবেলায় লভি গো কুলায় নিখিলশরণ চরণে।।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা --- আমার সোনার বাংলা

আমার সোনার বাংলা

আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।

চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস, আমার প্রাণে বাজায় বাঁশি॥
ও মা, ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে আমি কী দেখেছি মধুর হাসি॥

কী শোভা, কী ছায়া গো, কী স্নেহ, কী মায়া গো—

কী আঁচল বিছায়েছ বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে।
মা, তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো,
মরি হায়, হায় রে—
মা, তোর বদনখানি মলিন হলে, ও মা, আমি নয়নজলে ভাসি॥

তোমার এই খেলাঘরে শিশুকাল কাটিল রে,

তোমারি ধুলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানি।
তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কী দীপ জ্বালিস ঘরে,
মরি হায়, হায় রে—
তখন খেলাধুলা সকল ফেলে, ও মা, তোমার কোলে ছুটে আসি॥

ধেনু-চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে,

সারা দিন পাখি-ডাকা ছায়ায়-ঢাকা তোমার পল্লীবাটে,
তোমার ধানে-ভরা আঙিনাতে জীবনের দিন কাটে,
মরি হায়, হায় রে—
ও মা, আমার যে ভাই তারা সবাই, ও মা, তোমার রাখাল তোমার চাষি॥

ও মা, তোর চরণেতে দিলেম এই মাখা পেতে–

দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
ও মা, গরিবের ধন যা আছে তাই দিব চরণতলে,
মরি হায়, হায় রে—
আমি পরের ঘরে কিনব না আর, মা, তোর ভূষণ ব'লে গলার ফাঁসি॥